বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ অপরাহ্ন
রেজাউল করিম রেজা, নিজস্ব সংবাদদাতা : ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। বন্দিদের জন্য পবিত্র ঈদে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৭ জুন) ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ্ মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রতিদিনের কাগজকে এসব তথ্য জানান। কারাগারে বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধে হাজতি ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন ১৬৯৮ জন ।
এবার ঈদে কোনো রাজনৈতিক বিশেষ বন্দি নেই।
বিশেষ খাবারের মধ্যে ঈদের দিন সকালে বন্দিদের পায়েস মুড়ি, দুপুরে পোলাও, ডিম ও গরুর মাংস, (যারা গরুর মাংস খায় না তাদের জন্য খাসির মাংস), সালাদ, কোমল পানীয়, রাতে ভাত, আলুর দম,রুই মাছ ও ডালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮ টায় কারা অভ্যন্তরে কারারক্ষী ও বন্দিদের নিয়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জেলার শাহ্ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদের দিন আমরা বন্দিদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছি।
কারা অভ্যন্তরে ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঈদের দ্বিতীয় দিন বন্দিদের স্বজনদের সাক্ষাৎ ও বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার তারা বন্দিদের দিতে পারবেন।
এদিকে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ কয়েদি- হাজতিদের কঠোর নিয়মের মাঝে রেখে সংশোধনে বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন ।
যা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক । ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার হবে একটি অনুকরণীয় মডেল কারাগার, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন জেলার শাহ্ মোঃ রফিকুল ইসলাম।
জানাযায়, কারা বন্দীরা যাতে কোন রকমের সমস্যা ও তাদের অধিকার সঠিক ভাবে পায় সে লক্ষে কারা প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে কারাগারের গোয়েন্দা ( পিআই ইউ) সদস্যগন। মানবিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। উন্নত করা হয়েছে খাবারের মান। বিশুদ্ধ খাবার পানি, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং মদাক নির্মূলকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ।
পাশাপাশি কারাবন্দিদের শিক্ষা ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছেন জেলার শাহ্ মোঃ রফিকুল ইসলাম । কারা স্কুলে মূর্খরাও পড়া-লেখা করছেন। প্রতিমাসেই কোরআন শিখে হাফেজ হচ্ছেন অনেক কয়েদি- হাজতি । এছাড়াও প্রত্যেক বন্দি সপ্তাহে একদিন পরিবারের সাথে মোবাইলে কথা বলতে পারছেন । ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদি- হাজতির সংখ্যা প্রায় ১৬০০ জন । এতে ঘুম থেকে শুরু করে চলাচলে সুবিধা পাচ্ছেন তারা। রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ এ প্রতিপাদ্যে পরিচালিত ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার আওতায় এনে সুস্থ করাও হচ্ছে ।
জেলার শাহ্ মোঃ রফিকুল ইসলাম কয়েদি- হাজতিদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন আনতে সক্ষম হচ্ছে । অনিয়মের বেড়াজাল ভেঙে ধীরে ধীরে ভাল পরিবেশ সৃষ্টি করায় নতুন রূপে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার। জেলখানার বাইরে-ভেতরে কঠোর অবস্থা।
কয়েদি- হাজতির সংশোধনের জন্য কারাবিধি অনুসারে তৎপর কারা কর্তৃপক্ষ । মানসন্মত খাবারের পাশাপাশি কারাগারে শান্তি-শৃঙ্খলা অটুট রাখতে কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক তদারকি, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, মানসম্মত খাবার পরিবেশন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি কয়েদি-হাজতিদের মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করছেন জেলার ।
স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান কারগারে মাদক প্রতিরোধে কঠোর তিনি। কয়েদি- হাজতিদের সুস্থ রাখতে শক্ত রুটির স্থলে তাদেরকে পরিবেশন করা হচ্ছে গরম খিচুরি, গরম ভাত, পায়েস, রুটির ,খিচুরি, মাছ, মাংস ছাড়াও সুস্থ ও মাদক-মুক্ত করে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পরিবেশন করা হচ্ছে, পোলাও, মাংস, সাদা ভাত, আলুর দম, সালাদ, পান-সুপারি, মিষ্টি খাবার । কয়েদি-হাজতিরা এখন আগের তুলনায় অনেক ভালো আছেন। কারাগারের ভেতর বন্দিদের জন্য মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন, এখন জামিন-প্রাপ্ত মাদক মামলার আসামি আলাল মিয়া জানান, এক বছর কারাগারে ছিলাম ।
নিয়মিত মাদক সেবন করতাম বাইরে। শরীর ভেঙে গিয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষের বন্ধু-সুলভ আচরণ এবং ভাল মানের খাবার খেয়ে নিজেকে মাদক-মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। কারাগারে মানবিক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। কারাগারের বন্দি বর্তমানে জামিন-প্রাপ্ত খায়েশ প্রতিদিনের কাগজকে জানান, ৪টি চুরি মামলায় ৬ মাস কারাগারে ছিলাম । কারাগারে থাকার আগে বাসায় নিয়মিত খেতে পারতাম না । বাসার চেয়ে ভাল ছিলাম কারাগারে ।
একইরকম কথা বলেন, ২ মাস হাজতবাসকরা সিদ্দিকুর রহমানও । বন্দিদের বরাদ্দকৃত খাবার সুষ্ঠু বিতরণ, যথাযথ চিকিৎসা ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্দিরা কারা কর্তৃপক্ষের সংস্পর্শে এসে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের চর্চা করে সংশোধিত হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন । স্বাস্থ্য-ঝুঁকি ও নিরাপত্তহীনতা নেই । আছে বন্দিদের মুখে মুখে সুনাম ও সেবার কথা । কারাগার যেন সত্যিকারভাবে অপরাধী সংশোধন কেন্দ্র হয় আমরা সেলক্ষে কাজ করছি। কোন বন্দি যেন নিগ্রহের শিকার না হন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানান, জেলার শাহ্ মোঃ রফিকুল ইসলাম।